শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৭:০৭ অপরাহ্ন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনের প্রতিবাদ, নিজ ও পরিবারের জীবন রক্ষার আবেদন

জাকিয়া পারভীন, ফেনী প্রতিনিধি: / ৮৯ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৩

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) ও পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অপহরণের মত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। কিন্তু তারপরও সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সরকারও শুদ্ধি অভিযান এবং জবাবদিহিতার আওতায় না এনে; বরং তাদের পক্ষে সাফাই কথা বলছে। ফলে বিশেষজ্ঞগণের মতে এসব বাহিনী দিনে দিনে আরও ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) ‘‘মর্ণিং ওয়াচ টোয়েন্টি ফোর ডটকম’’ অনলাইন নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ।

মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ অভিযোগ করে বলেন, ইতিপূর্বে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের মামলায় র‌্যাব এর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগে আদালত থেকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অসংখ্য গুম, খুনের অভিযোগ রয়েছে র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ‘আয়না ঘর’ নামের গোপন আস্তানায় বছরের পর বছর মানুষকে ধরে নিয়ে র‌্যাব, ডিজিএফআই ও অন্যান্য বাহিনী গুম করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে সরকারকে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ ও সতর্ক সংকেত দিয়েছে। সম্প্রতি ৪ মার্চ ২০২৩ ইংরেজি তারিখে ‘নেত্র নিউজে’র সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক মিডিয়া ‘ডি ডাব্লিউ’ গণমাধ্যমে ‘ডেথ স্কোয়াড: ইনসাইট বাংলাদেশী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশন করে। কিন্তু কোনোভাবেই র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

মোহাম্মাদ রহমত উল্লাহ বলেন, গত ৩০ আগস্ট ২০২২ ইংরেজি তারিখে সোনাগাজী উপজেলায় বিএনপির একটি সভায় র‌্যাব-পুলিশের সহযোগিতায় আক্রমণ চালিয়ে সভা পণ্ডসহ বহু নেতাকর্মীকে আহত করার ঘটনা ঘটেছে। এ হামলায় নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সোনাগাজী উপজেলা সাধারণ সম্পাদক। এসব ঘটনার সাক্ষীদের নানাভাবে হুমকি ও হয়রানি করাসহ নানা অপকর্মের ঘটনা ফাঁস করে দিয়ে গত ৫ জানুয়ারি ২০২৩ ইংরেজি তারিখে বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির নির্বাহী সদস্য হিসেবে একটি মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠান করি।
যা গত ৬ই জানুয়ারি ২০২৩ ইংরেজি বিভিন্ন স্থানীয় ছাপা পত্রিকায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং এতে এলাকার মানুষের মনোযোগ বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। উক্ত সংবাদ প্রকাশের পর থেকে নিয়মিতভাবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হয়রানির শিকারে পরিণত হয়েছি আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন।

স্বাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ আরও বলেন, গত ৭ জানুয়ারি ২০২৩ইং তারিখে র‌্যাব সদস্যরা আমার বাড়িতে গিয়ে মামলার সাক্ষীর কাগজপত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দিতে সময় বেঁধে দেয় এবং ভয়ভীতি দেখায়, তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ অবস্থায় আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন নিরাপত্তার স্বার্থে গত ৮ জানুয়ারি ২০২৩ ইংরেজি যশোরে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করি। কিন্তু গত ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ ইংরেজি তারিখে র‌্যাবের কতিপয় সদস্য যশোরে আমার বন্ধুর বাসায় তল্লাশি চালায় এবং এসব ডকুমেন্টস ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেয়।
পাশাপাশি আরও ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের বিরুদ্ধে করা সংবাদ সম্মেলনের সকল ডকুমেন্টস ফেরত না দিলে অমাকে গুম করে ফেলবে হুমকি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি যে কোনো সময় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের গুম, খুনসহ বড় ধরনের কোনো বিপদের আশঙ্কা করছি।

তিনি আরও বলেন, উল্লেখ করা আবশ্যক যে, আমি গত ১৮ মার্চ ২০২১ ইংরেজি তারিখে ফেনীর সোনাগাজী মিউনিসিপ্যালিটির (পৌরসভার) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলাম। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে নির্বাচন কমিশন ২০ এপ্রিল ২০২১ইং তারিখ থেকে পিছিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং তারিখে পুনঃ তফসিলের তারিখ নির্ধারণ করে। তবে গত ১ লা সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং তারিখে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি অ্যডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন আমাকে ডেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন এবং প্রত্যাহার না করলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) দিয়ে তুলে নেওয়ার হুমকি দেন। এমতাবস্থায়, জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হই।

স্বাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ তার ঘটনাবহুল সময়গুলোর বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষতঃ পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ানের (র‌্যাব) নির্যাতন বন্ধের জন্য সরকার কাছে আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমার পরিবারসহ নিজের জীবন রক্ষার ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি করছি।


আরো সংবাদ পড়ুন...