মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৫১ অপরাহ্ন

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ফ্যাসিস্ট দোসরের দৌরাত্ম্য

নিজস্ব সংবাদ দাতা: / ১৯ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

সাইফুল মিয়া, কুলাউড়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের এক প্রতাপশালী স্থানীয় নেতা যার দৌরাত্ম্য এখনও চলমান। ফ্যাসিস্ট সরকারের দীর্ঘ পনের বছরের শাসনামলে তিনি ছিলেন একচ্ছত্র আধিপত্যবাদী মূর্তিমান আতংক। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরও যার নিজস্ব শাসনামল চলমান এবং তা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর কিছুদিনের জন্য ইংল্যান্ডে পালিয়ে গেলেও বর্তমানে দেশে ফিরে পুনরায় চলছে তার তান্ডবলীলা, এক কথায় বলা যেতে পারে যেখান শেষ রেখে গিয়েছিলেন, সেখান থেকেই পুনরায় ফিনিক্স পাখির মত নব জাগরণঃ এলাকার স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, তিনি পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক বড় বড় নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলেন বর্তমানে যার নেতৃত্ব দিচ্ছে তার কলেজ পড়ুয়া বখাটে ছেলে মারজান ইসলাম এবং স্থানীয় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থেকে কুলাউড়া পৌরসভার অন্তর্গত মাগুরা, সাদেকপুর ও সোনাপুর এলাকায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গড়ে তুলেছেন ত্রাসের রাজত্ব।

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ঐ নেতা পালিয়ে গেলেও তার অবর্তমানে তার ছেলে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং বিএনপি, জামাত নেতা ও সর্বোপরি উর্দ্ধতন প্রশাসনের সাথে আঁতাত করে এবং প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা ও আশ্বাস পেয়ে বিগত ফেব্রুয়ারী মাসে দেশে ফিরে পুনরায় তার রাজত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে হারানো সিংহাসন পুনরুদ্ধার করেন। তার বিরুদ্ধে পুনরায় ভূমি দখল, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় চাকুরিজীবিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। নির্দেশ অমান্য করলে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন ও তার ছেলের গুন্ডা বাহিনী দিয়ে যখন তখন মানুষ পিঠিয়ে নেতিয়ে রাখা, গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ হত্যা করে সেটিকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া, তার চক্ষুশূল ব্যাক্তিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়ে গণপিঠুনির মত নাটক সাজিয়ে মানুষ হত্যা করার মত গুরুতর অভিযোগ রয়েছে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার ভয়ে এলাকাবাসী প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সেই এলাকার স্থানীয় রেণু মিয়ার ছেলে সাইফুল মিয়া, যিনি ছাত্র জীবনে জামায়েতের ছাত্র সংগঠন শিবিরে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতে খড়ি হয়েছিল, পরবর্তীতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফখরুদ্দিনের শাসনামল শেষে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে আওয়ামীলীগে যোগদান করে ক্রমেই প্রতাপশালী হয়ে উঠেন এবং প্রথম দিকে টেন্ডার ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে নিজেকে প্রাক প্রদীপের আলোয় নিয়ে আসেন এবং বিগত ১৫ বছরেরও অধিক সময়ে তার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ক্রমেই পরাক্রমশালী হয়ে উঠেন।

স্থানীয় এক বাসিন্দার সাথে আলাপকালে সেই বাসিন্দা বলেন, “এই মানুষটি একাধারে নেতা, ব্যবসায়ী, ভূমি দস্যু, বন খেকো। তার মতের অমিল হলেই মানুষ পেটানো, জমি দখল, ব্যবসায়ী স্থানীয় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী- বেসরকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে হয়রানিমূলক চাঁদা আদায় তার নিত্য দিনের কাজ। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে তার হাত থেকে রেহাই পায়নি নিষ্পাপ শিশু এবং অসহায় নারী ও পারিবারিক সালিশে নামে দাম্পত্য কলহে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে আলাদা করে নিয়ে ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

সেই ব্যাক্তির সাথে আলাপকালে আরও জানা যায় যে, তাঁর ভয়াবহ নির্যাতন এবং ক্রমাগত হুমকির শিকার হয়ে দেশ ছেড়েছেন সে এলাকার স্বনামধন্য আগর-আতর ব্যবসায়ী মৃত জনাব মাসুক আহমেদের একমাত্র ছেলে পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী মাইয়ুম। ২০১৩ সালে ব্যবসায়ী মাসুক আহমেদের মৃত্যুর পর তার বিপুল সম্পত্তির উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সেই প্রভাবশালী নেতার।

প্রথমদিকে সেই নেতা তার ছেলের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে সম্পত্তি ক্রয়ের প্রস্তাব দিলে, সেই ব্যবসায়ীর ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা তার পৈত্তিক সম্পত্তি কোনভাবেই বিক্রি করতে রাজি না হওয়ার পরবর্তীতে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময়, সেই ব্যাংক কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকালে তুচ্ছ একটি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে সেটাকে রাজনৈতিকভাবে গড়িয়ে এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে ঐ কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করতেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে জোর জবরদস্তিমূলকভাবে সে ব্যাংক কর্মকর্তার পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করতে থাকেন। সে ব্যাংক কর্মকর্তা বিভিন্নভাবে প্রতিবাদের চেষ্টা করলেও তার সাথে পেরে উঠেননি।

সে ব্যাক্তি আরও জানান যে, সে দুষ্কৃতিকারি নেতার কলেজ পড়–য়া বখাটে ছেলে উক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার ছোট ছেলে মেহরানকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুড়িয়ে ফেলে। দ্রুত মেহরানকে নিকটবর্তী হসপিটালে নিয়ে গেলে তাকে জরুরী ভিত্তিতে সিলেট হসপিটালের বার্ন ই্উনিটে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঐ ব্যাংক কর্মকর্তা সে বিষয়টি নিয়ে বিচারের আশায় স্থানীয় প্রশাসন ও গণমান্য ব্যাক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও কোন প্রতিকার তো দূরের কথা উল্টো মরার উপর খাঁড়ার ঘা এর মত নেমে আসে নির্যাতন এবং ঐ ব্যাংক কর্মকর্তাকে হত্যার উদ্দেশ্য লাগাতার তার সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে আক্রমণ করলে এক পর্যায়ে তিনি দেশ পালাতে বাধ্য হন।

এই রিপোর্ট চলাকালীন সময়ে এই প্রতিবেদক উক্ত ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শন করলে বাড়িটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় এবং স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায় যে, ঐ ব্যাংক কর্মকর্তা দেশত্যাগের পর হতে তার স্ত্রী, মা ও বাচ্চারা পলাতক অবস্থায় আছেন, কিন্তু কোথায় আছেন এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর কেউ দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তার মা ও স্ত্রী-সন্তান কিছু দিনের জন্য এলেও পরবর্তীতে সে নেতার ছেলের অত্যাচার ও ক্রমাগত হুমকিতে পুনরায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায় যে, লন্ডন থেকে ফিরে এসে তিনি স্থানীয় বিভিন্ন জামাত ইসলাম ও বিএনপির প্রভাব বিস্তারকারী কিছু নেতার বিভিন্ন ফান্ডে বিপুল অংকের টাকা দান (Donation) করার মাধ্যমে ঘনিষ্টতা গড়ে তোলেন এবং সেই নেতাদের মাধ্যমে স্থানীয় থানার দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে পুনরায় সখ্যতা গড়ে তোলে তার রাজত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং বর্তমানে তিনি অনেক বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সহায়তায় বাজার সিন্ডিকেট তথা চিনি, পেঁয়াজ ও সারের ডিলারশীপ বাগিয়ে নেন।

এমনকি সরকারী ত্রাণও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী টিসিবি’র পণ্য সরবরাহের দ্বায়িত্বও নিজে বাগিয়ে নিয়েছেন। যেগুলোর ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। উপরোক্ত সুযোগ সুবিধা গ্রহণের সময় সেই নেতা নিজেকে উপরের মহলের লোক পরিচয় দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতেন।

এছাড়াও বর্তমানে তার মহলে দখলদারি পেশা অব্যাহত রেখেছেন যেমন: জবরদস্তিমূলকভাবে জমি দখল, ভয় দেখিয়ে জমির প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে জমির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম দামে ও নামমাত্র মূল্যে জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে নেওয়া। অতিসম্প্রতি আজির মিয়া নামের এক ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদকের কাছে তার দূর্দশার কথা তুলে ধরেন যার পেছনে রয়েছে তার ছেলের নিয়ন্ত্রণাধীন এক শক্তিশালী সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।

বর্তমানে তার এক সমালোচনাকারী তার সন্ত্রাসী বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়ে গুরুতর জখমী অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন এবং তার সাথে এ প্রতিবেদকের সাক্ষাৎ কালে, সেই ব্যাক্তি জানান যে, তিনি বাড়ি হতে মোটর সাইকেল যোগে স্থানীয় বাজারে যাওয়ার সময় পিছন দিক হতে তার ছেলের ব্যবহৃত জিপ গাড়িটি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধাক্কা দেয় এবং তিনি পা, মাথা ও ঘাড়ে গুরুতর জখম হয়ে প্রায় ২ মাস পর হাসপাতাল হতে বাড়ি ফিরেছেন।

এমতাবস্থায় তিনি স্থানীয় থানায় মামলা করলেও থানা তাকে ও তার ছেলেকে গ্রেফতারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সাইফুল মিয়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি তার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন- জমি সংক্রান্ত বিষয় ও ব্যবসা নিয়ে কিছু মানুষের সাথে তার ঝামেলা আছে এবং তিনি একটি স্থানীয় গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শিকার এবং তাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

এসব বিষয় নিয়ে কুলাউড়া থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি দায়সারাভাবে জবাব দেন, সাইফুল মিয়ার বিরুদ্ধে ইদানিং জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু অভিযোগ আছে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে আমি অবগত নই, তবে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।


আরো সংবাদ পড়ুন...