শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:৩১ অপরাহ্ন

শেষের পথে প্রাণের বইমেলা, জমজমাট বেচাকেনা

অনলাইন ডেস্ক / ৩ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আর মাত্র পাঁচদিন পরই পর্দা নামবে বইপ্রেমীদের প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার। শেষ সময়ে এসে বইপ্রেমীদের মনে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। এই সময়ে ক্রেতাদের ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ জমজমাট হয়ে উঠেছে। বেচাকেনাও চলছে বেশ।

রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী অমর একুশে বইমেলার। তবে বইয়ের দোকান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেশি হওয়ায় এই অংশেই দর্শনার্থীদের বেশি ভিড় দেখা যায়।

রোববার বিকেলে মেলায় বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মেলায় ক্রেতারা এসেছেন, দেখেছেন, বইও কিনেছেন। তবে অনেক দর্শনার্থীদের মেলা প্রাঙ্গণে আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায়। শেষের দিকে এসে জমে উঠেছে বইমেলা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই মেলায় বইপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। এদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন বয়সের মানুষের হাতেই ছিল বইয়ের ব্যাগ। অন্যান্য দিনের মতো বেশি ভিড় দেখা যায় মেলার শিশু কর্ণার ও স্টলগুলোতে।

বইমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সি ক্রেতাদের ভিড়। তবে ক্রেতার থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যাই মেলায় বেশি। বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে। বইমেলা প্রাঙ্গণে এদিন যেন তিল ধারণের জায়গা নেই। সকল বয়সের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে এবারের বই মেলা। এদিন লোকসমাগমে জমজমাট হয়ে উঠেছে বইমেলা। স্টলগুলোতে বিক্রি বাড়ায় খুশি বইয়ের দোকানিরাও।

বাতিঘর, মাওলা ব্রাদার্স, কথাপ্রকাশ, ঐতিহ্য, আদর্শ, জ্ঞ্যানকোষ প্রকাশনী, অন্যপ্রকাশ, ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ, আগামী প্রকাশনীসহ অধিকাংশ স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। ছোট প্রকাশনীগুলোতেও ছিল প্রচুর মানুষের সমাগম।

মেলায় তরুণ-তরুণীদের সরব উপস্থিত ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন তরুণ-তরুণীরা। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে, আবার কেউ এসেছেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে।

প্রকাশকরা বলছেন, মেলার শেষ সময়ে পছন্দের বই কিনতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সি মানুষের পদচারণায় মুখরিত মেলা। এতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। অন্যদিকে লেখক-পাঠক আড্ডায় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয়েছে মিলন মেলায়।

মেলার দর্শনার্থীরা বলছেন, অল্প কিছু দিন পরে শেষ হয়ে যাবে মেলা। ফলে যারা নানা ব্যস্ততার কারণে এতোদিন মেলায় আসতে পারেননি, তারাও শেষ সময় এসে নিজেদের পছন্দের লেখকের বই কিনছেন।

ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম এবছর প্রথমবারের মতো মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, দিনের বেশিভাগ সময় টিউশনি করে সময় পার হয়ে যায়। ফলে এবারের মেলায় আসা হয়নি। এজন্য সকালে একটি টিউশনি করার পর বাকি দুইটি থেকে ছুটি নিয়ে মেলায় এসেছি।

মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী আল ইমরান বলেন, মেলা প্রায় শেষের দিকে। বেশ কয়েক দিন ধরে মেলায় মানুষের উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ কারণে আমাদের বিক্রিও বেড়েছে।

অন্যপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী খায়ের ভূঁইয়া বলেন, আমাদের প্রকাশনী থেকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ বই ছাপানো হয়। এজন্য আমাদের স্টলে হুমায়ূনপ্রেমীদের ভিড় সবসময় একটু বেশিই থাকে, বিক্রিও হয় অনেক।

অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ জানান, শেষ সময়ে ক্রেতা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সবসময় এমনটাই হয়ে আসছে। বিক্রি নিয়ে আমাদের সন্তুষ্টির কিছু নেই। কেননা বইয়ের বিক্রি সংখ্যা কিন্তু তেমন নয়। আমরা যতটা আশা করছি বা সবাই যা ভাবছে বাস্তবে তা হচ্ছে না।

রোববার মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৭টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নারীরা: প্রিভিলেজের দায়’শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাওলী মাহবুব। সভাপতিত্ব করেন রেহনুমা আহমেদ।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও গবেষক ড. সুকোমল বড়ুয়া এবং গবেষক তাহমিদাল জামি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি কাজী আনারকলি, মামুন সারওয়ার, আফসার নিজাম, তাসনীম মাহমুদ, মো. আমিনুল ইসলাম, গোলাম শফিক, নূরুল ইসলাম মনি, মালিহা পারভীন, মতেন্দ্র মানকীন, মিঠুন রাকসাম এবং কবির হোসেন। আজ ছিল সাজু আহমেদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘নৃত্যালেখ্য, ছন্দে রবির আলো’ এবং ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস লিমিটেডের (বাফা) পরিবেশনা। আজ সোমবার মেলার ২৪তম দিন মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবর্ষ: অমলেন্দু বিশ্বাস’শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শাহমান মৈশান। সভাপতিত্ব করবেন মিলনকান্তি দে।


আরো সংবাদ পড়ুন...