দৌলতদিয়া ক্যাম্প, যা বাংলাদেশের বৃহত্তম যৌনপল্লীগুলোর একটি, সেখানে যৌনকর্মীদের সংগ্রামের শেষ নেই। সমাজের প্রান্তিক এবং অবহেলিত এই নারীরা আরেকটি বড় হুমকির সম্মুখীন: যারা তাদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা, তারাই তাদের শোষণ করছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তারা, বিশেষ করে সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) শফিক এবং মোমিন, তাদের দায়িত্বকে সুরক্ষার পরিবর্তে শোষণের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছেন।
দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীরা শুধুমাত্র সামাজিক কলঙ্কের শিকারই নন, তারা পুলিশের অবিরাম হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকারও হন। একটি বেনামী যৌনকর্মীর দেয়া বিবৃতি অনুযায়ী, পুলিশ নিয়মিত তাদের কাজ চালিয়ে যেতে ঘুষ দাবি করে।
“তারা আমাদের সাথে মানুষের মতো আচরণ করে না,” তিনি বলেন। “যদি আমরা তাদের দাবি করা ঘুষ দিতে না পারি, তারা আমাদের হয়রানি করে। কখনো কখনো তারা আমাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। এটি অত্যন্ত অপমানজনক।”
পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন ঘুষ দিতে না পারলে তা যৌন নির্যাতনের রূপ নেয়। “তারা ভাবে আমরা যৌনকর্মী বলে আমাদের সাথে যেকোন কিছু করতে পারে। যদি আমরা তাদের প্রত্যাখ্যান করি, তারা আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার বা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার হুমকি দেয়,” ওই যৌনকর্মী যোগ করেন। তার কণ্ঠ কাঁপছিল যখন তিনি এই নির্যাতনের কথা বলছিলেন, যা তাদের জীবনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানায় নিযুক্ত এসআই শফিক এবং মোমিন এই শোষণের সাথে জড়িত বলে একাধিক ঘটনায় উল্লেখ করা হয়েছে। আইন রক্ষার দায়িত্বে থাকা এই ব্যক্তিরা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শোষণ এবং ভীতি প্রদর্শন করছেন।
উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নজরে থাকার পরও এই ধরনের নির্যাতন চলতে থাকা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং হৃদয়বিদারক। এই নারীদের জন্য ন্যায়বিচার কেবল একটি দূরবর্তী স্বপ্ন, এবং তাদের বেঁচে থাকা তাদের মর্যাদার দামে আসে। যখন আইন রক্ষকরা অপরাধীতে পরিণত হয়, তখন তারা কোথায় যাবে সাহায্যের জন্য?
এই নিবন্ধের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই যে এসআই শফিক এবং মোমিনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তাদের কর্মকাণ্ড শুধু তাদের পরা পোশাকের অসম্মানই নয়, এটি এই নারীদের মুখোমুখি হওয়া নির্যাতনের চক্রকে আরও শক্তিশালী করে।
দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীরা এমন মানুষ, যারা সম্মান, মর্যাদা এবং সুরক্ষার অধিকার রাখেন। এখন সময় এসেছে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করার এবং এই শোষণের অবসান ঘটানোর। এই নারীদের তাদের রক্ষকদের কাছ থেকে ভীতিতে দিন কাটাতে হবে না।
এই ঘটনা বাংলাদেশের সরকার এবং পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়ে দাঁড়াক, যাতে তারা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে পারে এবং দৌলতদিয়ার বিস্মৃত কণ্ঠস্বরদের জন্য ন্যায়বিচারের প্রথম পদক্ষেপ নিতে পারে।