শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ০৬:২২ অপরাহ্ন

রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মাঝে কিশোরগঞ্জে হিন্দু পরিবারের ওপর চরম পন্থীদের হামলা

ষ্টাফ রিপোর্টার: / ১৫ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪

১৭ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জের এক হিন্দু পরিবার ইসলামী চরম পন্থীদের নৃশংস হামলার শিকার হয়। চরমপন্থী নেতা মাওলানা আজহার আলীর নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়, যা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সৃষ্ট আইনের শূন্যতা ও বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে সংঘটিত হয়। হামলাকারীরা উপাসনার প্রতিমা গুঁড়িয়ে দেয়, ঘর-বাড়ি লুটপাট করে, এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার হুমকি দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, হামলাকারীরা ধর্মীয় স্লোগান দিতে দিতে পরিবারটিকে হুমকি দেয় এবং বলে “ওসি ইসমাইল হাসানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস কিভাবে হয়! সীমাজানো, না হলে শেষ করে দেব।” চরমপন্থী সংগঠন হারকাতুল জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত মাওলানা আজহার আলী পরিবারটিকে স্পষ্টতই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে, “তোমরা হিন্দু হয়ে ওসি ইসমাইলকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখাও? যদি আবার আসতে হয়, তোমাদের শিরশ্ছেদ করব!”

এই হামলা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন বাংলাদেশ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতায় আচ্ছন্ন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, যার সুযোগ নিয়ে অপরাধী চক্র ও ধর্মীয় চরমপন্থীরা সংখ্যালঘুদের ওপর পরিকল্পিত ভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে।

সূত্রমতে, ওসি ইসমাইল এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রতিশোধ নিতে এই হামলার নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর নিকুমার দাশ কর্তৃক দায়ের করা অভিযোগের প্রতিশোধ নিতেই তিনি এই চরমপন্থীদের মাধ্যমে হামলা সংগঠিত করেন।

প্রাণ ভয়ে, পরিবারটি সেদিন রাতেই ঢাকা পালিয়ে যায়, তাদের পৈতৃক বাড়ি ও ব্যবসা ফেলে রেখে। প্রতিবেশীরা ভয় ও প্রতিশোধের আশঙ্কায় কোন সহায়তা করতে সাহস পাননি, যা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চলমান নির্যাতনের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। “এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে দেশ জুড়ে হিন্দু পরিবার গুলো ধারাবাহিক ভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছে,” বলেন এক সংখ্যালঘু অধিকার কর্মী।

যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ওসি ইসমাইল এখনও ক্ষমতায় রয়েছে এবং হামলাকারীদের রক্ষা করছে, বরং ভুক্ত ভোগীদের ন্যায় বিচার পাওয়ার পথরুদ্ধ করছে। এই পরিবারটির দুর্দশা বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চলমান দমন পীড়নেরই অংশ, যা দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর আরও প্রকট হয়েছে।

বর্তমানে, পরিবারটি আত্মগোপনে রয়েছে, আরও হামলার ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। এদিকে, হিন্দুসম্প্রদায়ের নেতারা নতুন সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, যেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।


আরো সংবাদ পড়ুন...